অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে মানুষকে হয়রানির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে।
সারাদেশের বিচারকদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের দেয়া অভিভাষণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শনিবার তিনি এ কথা বলেন। সূত্র: বাসস
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘ঢালাও মামলা ও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে মানুষকে হয়রানি করা এবং মানুষের জীবন-জীবিকাকে নিশ্চিহ্ন করা থেকে আমরা বেরুতে চাই।
‘শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বিচার বিভাগ থেকে অনেক অবিচার হয়েছে। মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে অসংখ্য মানুষকে হয়রানি করা হয়েছে। বিচার বিভাগ থেকে যেন আর কোনো অবিচার না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’
হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকদের উদ্দেশে ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘বিচারপতিদের কাছে মানুষ বিচার চাইতে আসে। তারা বিব্রত বোধ করেন। কেন বিব্রত বোধ করেন আপনি? বিব্রত বোধ করবেন যখন আপনার ভাই-বোন বিচার চাইতে আসে।
‘বিচারপ্রার্থী মানুষ কোথাও বিচার না পেয়ে আপনার কাছে এসেছে। আপনি কীভাবে বিব্রত বোধ করেন? বিচার করা বিচারপতিদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। আবেদন প্রয়োজনে শুনে রিজেক্ট করে দেন।
‘বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের আর্জি গ্রহণ করতে বিব্রত বোধ করেছিলেন বিচারপতি। কেন করেছিলেন। এটা সাংবিধানিক দায়িত্ব না? আপনি শুনে রিজেক্ট করে দেন। সমস্যা নেই। আপনি শুনবেনই না, এটা তো হতে পারে না।’
আদালতে বিচার প্রার্থী যাতে হামলার শিকার না হন সে আহ্বান জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, মামলা হওয়া মানেই অপরাধী নয়। কোনো আসামি বা বিচারপ্রার্থীর ওপর যেন কোনো হামলার ঘটনা না ঘটে। এরূপ পরিস্থিতি এড়াতে বিচারকগণ বার নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা নিতে পারেন।’
আইন উপদেষ্টা জানান, নিম্ন আদালতে বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেতে গেলে অনেক পরীক্ষা দিয়ে আসতে হয়। উচ্চ আদালতেও বিচারক নিয়োগে সেই প্রক্রিয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। নিম্ন আদালতের বিচারকদের বিভিন্ন বৈষম্য নিরসনে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে সহস্রাধিক মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। অসংখ্য মানুষ মারাত্মক আহত হয়েছেন। দৃষ্টিহীন ও পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়েছে অনেককে। শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে আরও মানুষ হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল।
‘এই উপমহাদেশে কোনো ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাতে এতো মানুষকে প্রাণ দিতে হয়নি। শ্রীলঙ্কায় স্বৈরাচারী সরকারকে হটাতে মাত্র নয়জনকে প্রাণ দিতে হয়েছে। বাংলাদেশেও এর আগে নয় বছর ধরে চলা স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারকে হটাতে ২৬ জনকে প্রাণ দিতে হয়েছে।’
অন্তর্বর্তী সরকার মেধা, যোগ্যতা ও সততাকে মূল্যায়ন করে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান প্রধান বিচারপতি নিয়োগ তার বড় প্রমাণ।
ছাত্র-জনতার আন্দলোনে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
সুপ্রিম কোর্টের ইনার গার্ডেনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিচারকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন নওগাঁর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বনাথ মন্ডল এবং খুলনার জেলা ও দায়রা জজ মাহমুদা খাতুন। তারা দেশব্যাপী নিম্ন আদালতে বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন। পাশাপাশি সংস্কারের পরামর্শ দেন।
অভিভাষণ অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের বিচারপতি, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান আপিল বিভাগের প্রাক্তন বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম রব্বানী, সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তা এবং সারাদেশ থেকে আসা দুই হাজার বিচারক উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান বিচারপতি অভিভাষণে বিচার বিভাগের জন্য একটি রোডম্যাপ তুলে ধরেন।